লালমনিরহাট জেলায় চা চাষের অপার সম্ভাবনা

লালমনিরহাট জেলায় চা চাষের অপার সম্ভাবনা
  •                                                       
























চা শিল্পের ইতিহাস ঐতিহ্য অনেক পুরনো। কিন্তু পুরনো আর আজকের নতুনের মধ্যে অনেক ফারাক। হাঁটি হাঁটি পা পা করে চা শিল্প আজ স্বাধীন দেশের একটি উন্নয়নশীল শিল্পের খাতায় নাম লিখাতে সক্ষম হয়েছে। অর্থকরী ও ঐতিহ্যবাহী চা শিল্পখাত এখন সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে উপনীত হয়েছে। চায়ের অভ্যন্তরীণ ও রফতানি বাজার চাহিদাকে ঘিরেই এই উজ্জ্বল সম্ভাবনা রচিত হচ্ছে। সুদূর অতীতকালে এদেশের মসলিন কাপড় কিংবা নিকট অতীতে পাট-চামড়া শিল্পের মতোই সুপ্রাচীন শিল্প ও বাণিজ্য খাত চা। সগৌরবে এগিয়ে চলেছে সম্ভাবনার হাতছানি দিয়ে। চা শিল্প এখন আর অবহেলিত নয়। প্রচলিত এই রফতানি পণ্যটি তার সুবিশাল বাজার সহসাই ফিরে পেতে পারে। দীর্ঘদিন যাবত্ চা শিল্প খাতকে উপেক্ষা, অবহেলার কারণে কালের বিবর্তনে হারাতে যাচ্ছিল তার সুখ্যাতি। এবার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য সময়োপযোগী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যাতে বনেদি চা শিল্প অচিরেই ঘুরে দাঁড়াতে পারে। বলে রাখা ভাল প্রথম চা বাগান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। 
আঠারো শো আঠাশ সালে। অবিভক্ত ভারতে চট্টগ্রামের কোদালায় তখনই জমি নেয়া হয়। বর্তমানে যেখানে চট্টগ্রাম ক্লাব ১৮৪০ সালে সেখানেই পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করা হয় প্রথম চা গাছ। তবে প্রথম বাণিজ্যিক আবাদ শুরু হয় সিলেটে, আঠারো শো চুয়ান্ন সালে। সে বছর সিলেট শহরের উপকণ্ঠে মালনিছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বাগানে চা উৎপাদনের মধ্য দিয়ে চা শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। তখন থেকে ধীরে ধীরে চা এ দেশে একটি কৃষিভিত্তিক শ্রমঘণ শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি আয় বৃদ্ধি, আমদানি বিকল্প দ্রব্য উৎপাদন এবং গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাসকরণের মাধ্যমে চা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। চা উত্পাদন শুধু সিলেটেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ১৮৬০ সালে হবিগঞ্জের লালচাঁন্দ চা বাগান ও মৌলভীবাজারের মির্তিঙ্গা চা বাগানে চায়ের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়। ২০০০ সালে উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়েও ছোট আঙ্গিকে চায়ের চাষ শুরু হয়। ২০০৫ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামেও শুরু হয় চায়ের চাষ। 

যেহেতু লালমনিরহাট এর সীমানাবর্তী ভারতের জেলাগুলোতে ব্যাপক ভাবে চা চাষ হয়। তাই এই অঞ্চলে চা চাষের জন্য উপযোগী। সম্প্রতি লালমনিরহাটে বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুদ্র পরিসরে চা চাষ করা শুরু হয়েছে । হাতীবান্ধায় চা প্রসেসিং একটি প্ল্যান্ট ও তৈরি হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত চা পাতার জন্য প্রসেসিং প্ল্যান্টটি সচল রাখা যাচ্ছে না। উক্ত অঞ্চলে চা চাষের জন্য সরকারী উদ্যোগ নিলে উক্ত অঞ্চলের অনেক পতিত জমি চাষের আওতায় আনা যাবে। পাশাপাশি বিপুল পরিমান জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান তৈরি করা যাবে। এতে যেমন উৎপাদন বাড়বে পাশাপাশি উক্ত অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।